ব্লগার শিমু হত্যাচেষ্টা, উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর পরিকল্পিত হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বহুল আলোচিত লেখক, ব্লগার সুমিয়া শিমু হত্যার উদ্দেশ্যে তার বাসভবনে পরিকল্পিত হামলা চালায় একদল উগ্রপন্থী গোষ্ঠী। এসময় দুর্বৃত্তরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। পরিবারের সদস্যদের শারীরির এবং মানুষিকভাবেও লাঞ্চিত করে।

গত ২৪মার্চ (সোমবার) মধ্যরাতে সুমিয়া শিমুর বরিশাল গৌরনদীর অবস্থিত নিজ বাসায় এ অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে। ব্লগার ও লেখক সুমিয়া শিমু ২০২৫ সালের বরিশাল মেট্রো এর ওয়েবে ধর্ম ভিত্তিক, ধর্মান্ধতা, ধর্ম নিরপেক্ষতা, ধর্মীও উগ্রবাদীদের বিষয়ে লিখা প্রকাশ করেন ।

সুমিয়া শিমুর পিতা এম ডি সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “শিমু উদারপন্থী। সে একজন মানবাধিকার কর্মী। এরই জেরে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলেও জানান। এরা উগ্রপন্থী কোন গোষ্ঠীরই সদস্য বলেও জানান তিনি। ইতোপূর্বেও গত ৫ই আগস্ট ২০২৪ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর একই কায়দায় হামলা চালায় এ গোষ্ঠীটি। এ ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা বাদী হয়ে মামলা করতে গেলে থানায় মামলা নেয়নি পুলিশ।”

তিনি আরও বলেন, “প্যান্ট আর হাফ শার্ট পড়া চারজন যুবক কিছু বুঝে উঠার আগেই দরজা ভেঙ্গে অতর্কিতে ভেতরে ঢুকে যায়। যুবকদের পুরো মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা ছিলো এবং চোখে ছিলো কালো চশমা। সবার হাতেই দেশীয় ধারালো অস্ত্র (রামদা, চাপাতি) ছিলো। অস্ত্রের মুখে তারা শিমুর অবস্থান জানতে চায়। সে বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছে। উগ্রপন্থী এ গোষ্ঠীটি লন্ডনে তার অবস্থান নিশ্চিত হতে চায়। সেখানে তার অবস্থান জানাতে না চাওয়ায় তারা পুরো বাড়িতে এলোপাথাড়ি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। পরিবারের সকল সদস্যদের বেধড়ক মারধর করে এক পর্যায়ে বাসার বাইরে তালা লাগিয়ে চলে যায়। আমিও এই হামলার ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হই।”

সুমিয়া শিমু, কট্টর ইসলামের সমালোচনা ও বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদের জন্য বাংলাদেশের ইসলামিস্টদের নিকট আক্রমণের লক্ষ্যবস্ত। বাংলাদেশে বিগত সময়ে অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাস, আরেফিন দীপন সহ অসংখ্য মুক্তচিন্তক, ব্লগার, লেখক প্রকাশককে হত্যা করা হয়েছে। নাস্তিক ও ইসলামবিরোধী ফতোয়া দিয়ে তাদের হত্যার জন্য নামের তালিকা প্রকাশ করেছিল ও তাদের হত্যার জন্য ক্যাম্পেইন করেছিল জঙ্গিবাদী, সন্ত্রাসী সংগঠন আনসার আল ইসলাম, হিজবুত তাহরির, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামি ঐক্যজোট এর কর্মীরা।

উল্লেখ্য বিভিন্ন সমর্থিত ও অসমর্থিত সূত্রের দাবী, গত ৫ই আগস্ট ২০২৪ পর থেকে প্রান্তিক বিবিধ গোষ্ঠীর সদস্যরা একাধিকবার দেশের বিভিন্ন স্থানে হেনস্থা, হয়রানি, হামলা ও নিগ্রহের শিকার হচ্ছে পুনরুত্থিত ইসলামিক দলগুলোর কাছে। ধর্মানুভূতিতে আঘাত সহ সমকামী, উভকামী এবং ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে প্রকাশিত লেখার জের ধরেই এসব পরিকল্পিত হামলার ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত অনেক লেখক, ব্লগার, অধিকার কর্মীরা সম্প্রতি নিজ নিজ বাসস্থানে হামলা ও হেনস্থার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় দেশের উগ্রবাদী ধর্মীও গোষ্ঠীর নতুন ভাবে আত্মপ্রকাশের বিষয়গুলো সামনে আসছে। একই সাথে দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী সহ লেখালেখির সাথে জড়িত লেখক, ব্লগার ও অধিকার কর্মীদেরও নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ার সাথে হামলার মুখেও পড়ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *