Friday, May 03rd

Last update09:04:19 PM GMT

: সম্পাদকীয় দিনেদিনে বাড়ছে বেকার সংখ্যা, সমাধান কি নেই?

দিনেদিনে বাড়ছে বেকার সংখ্যা, সমাধান কি নেই?

E-mail Print PDF

দেশে বাড়ছে সাক্ষরতার হার, যা এখন প্রায় ৭৫ শতাংশ। এটা অবশ্যই একটি গর্বের বিষয়। কিন্তু সেই সঙ্গে বাড়ছে বেকারত্বের হারও। ছোট্ট স্বাধীন এই দেশের কয়েকটি সমস্যার মধ্যে অন্যতম একটা সমস্যা হলো বেকারত্ব। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। এ দেশের কর্মসংস্থানেও তারুণ্যের ভ‚মিকা রয়েছে অসামান্য। কিন্তু তাও ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে বেকারের সংখ্যা। ১০ বছর আগে এদেশে প্রায় ১২ লাখ মানুষ বেকার ছিল। কিন্তু বর্তমান দ্বিগুণ হয়ে বেকার জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ লাখে। এদেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কমপক্ষে ৭০%-এর হাতে প্রত্যাশিত পেশা বা বৃত্তি নেই। দিন দিন এ অবস্থা আরও চরম আকার ধারণ করছে। বর্তমানে সমস্যা এত প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে যে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আমাদের দেশ দ্বিতীয় স্থানে। ফারসি উপসর্গ ‘বে’ আবার ফারসি শব্দ ‘কার’ যুক্ত হয়ে ‘বেকার' শব্দটি তৈরি হয়েছে। ‘বে’ অর্থ হীন আর কার অর্থ কর্ম, অর্থাৎ বেকার অর্থ কর্মহীন। অর্থনীতির পরিভাষায় সেই বেকার, যে কাজ করার যোগ্যতা ও ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও কর্মসংস্থান বা কাজের সুযোগ পায় না। দেশে বেকার সমস্যার মুল কারণ হলো জনসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে পর্যাপ্ত চাকরিদাতা কিংবা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অভাব। এই বেকারত্ব যেকোনো দেশের জন্য অভিশাপ স্বরূপ। আর সে দেশ যদি হয় উন্নয়নশীল তাহলে তার প্রভাব হয় অতি ভয়ংকর। দেশের যুব সমাজের বড় একটি অংশ বেকার। এর মধ্যে শিক্ষিত বেকার বেশি। দীর্ঘ দিন বেকার থাকার ফলে তার ভিতর হতাশার সৃষ্টি হয়। আর কেউ কেউ এই হতাশা থেকে বের হতে গিয়ে ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলে। অনেকে নিজেকে অসামাজিক ও খারাপ কাজে জড়িয়ে ফেলে। ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অন্যায় বেড়ে যায়। তাই বেকারত্ব ঘোচাতে এখনি সময় এগিয়ে আসার। এ দেশে কর্মমুখী শিক্ষার খুব অভাব। কর্মমুখী শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে হবে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসংস্থান পদ অনুযায়ী ভর্তি করাতে হবে। কার্যকরী শিক্ষা দিতে হবে। সরকারকে যুবকদের যোগ্যতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে শিল্প-কলকারখানা স্থাপন করে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পকারখানা গড়ে তুলে দক্ষ, অদক্ষ তরুণ-তরুণীদের সেখানে কাজে লাগাতে হবে। যুবকদের চাকরির মানসিকতা পরিহার করে আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দেশে কৃষি ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিক বিদেশে কর্মরত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা গেলে এক্ষেত্রে আরও অধিক সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব। বেকারত্ব বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতির পথে সবচেয়ে বড়ো বাধা। তাই যুবসমাজকে বেকারত্বের অভিশাপ ও অপবাদ ঘোচাতে হলে ও জাতির কাঁধ থেকে বেকারত্বের বিশাল বোঝা নামাতে হলে সরকারকে যেমন এগিয়ে আসতে হবে, তেমনি জনগণকেও সমবেত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তা হলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

Share this post